রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত শুরু হচ্ছে

ডেস্ক রিপোর্ট – মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রস্তুতি শুরু করছেন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি)। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আজ বুধবার আইসিসির সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসছে। এক সপ্তাহের সফরে প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইসিসির প্রতিনিধিদলটির কাজ হবে রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দেওয়া। এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সিদ্ধান্ত হবে। প্রতিনিধিদলের কাজটি অনেকটা বিচার শুরুর আগে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) তৈরি করার মতো।

আইসিসি প্রতিনিধিদলটির বাংলাদেশে আসার ঠিক আগমুহূর্তে ঢাকা ঘুরে গেছেন এশিয়াবিষয়ক চীনের বিশেষ দূত সান গুয়োশিয়াং। গত দুই বছরে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশে এলেও চীনের বিশেষ দূত প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের শিবিরও পরিদর্শন করেন। তিনি সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন।

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে যাতে রাখাইনে পাঠিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়, মূলত এই বিষয়েই গুরুত্ব দিয়েছেন চীনের বিশেষ দূত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চীনের দূতকে বাংলাদেশ স্পষ্ট করেই বলেছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর মতো পরিবেশ রাখাইনে এখনো সৃষ্টি করতে পারেনি মিয়ানমার। জোর করে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে পাঠাবে না বাংলাদেশ।

আইসিসি এবং চীন যখন দুটি ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে কাজ করছে, ঠিক তখনই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে আবারও তৎপর হয়েছে জাতিসংঘ। জেনেভায় অনুষ্ঠেয় (ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু হয়েছে) জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে মিয়ানমারের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ দূত ইয়াংহি লি রোহিঙ্গা বিষয়ে তাঁর প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের জন্য তিনি গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফর করেন।

রোহিঙ্গাদের জোর করে তাদের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসির প্রাক্‌–বিচারিক শুনানি আদালত গত বছরের সেপ্টেম্বরে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের শুনানির আদালতের রায়ে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বিতাড়নের ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে কি না, তা নিয়ে আদালতের অধিকার চর্চার সুযোগ রয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান মিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গণহত্যার উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের জেনারেলরা রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশের দুই সপ্তাহের মাথায় আইসিসির প্রাক্‌–বিচারিক আদালত রোহিঙ্গা নিপীড়নের তদন্তের এখতিয়ার প্রশ্নে রায় দেন। আইসিসির প্রাক্‌–শুনানি আদালত তাঁদের রায় দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কাছে এ নিয়ে মত জানতে চেয়েছিলেন। আইসিসির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মতামত পাঠায় বাংলাদেশ। কিন্তু মতামত পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায় মিয়ানমার।

নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলাল প্রথম আলোকে বলেন, আইসিসির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মূলত তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ। তাঁরা পূর্ণাঙ্গ তদন্তের বিষয়ে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য-উপাত্ত পরীক্ষা করে দেখবেন। এরপর আইসিসিতে ফিরে গিয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেবেন। এরপর প্রাক্‌–শুনানি আদালত ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে একটি শুনানি করে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।

প্রতিবেদন নিয়ে একাধিক শুনানি হবে কি না, জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, সাধারণত পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরুর বিষয়ে এক দফা শুনানি হয়ে থাকে।

আরও খবর